প্রকাশিত: Fri, Jan 20, 2023 8:17 AM আপডেট: Sun, Dec 7, 2025 4:12 AM
মুহাম্মদ জাফর ইকবাল অথবা ব্যানালিটি অফ ইভিল
পারভেজ আলম
ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল কি কোনো খারাপ লোক? তিনি কি সরল মনের মানুষ? নাকি একজন জটিল মনের ও কূটবুদ্ধিসম্পন্ন লোক? তিনি কি নিজের রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে সৎ? নাকি আপাদমস্তক ধান্দাবাজ একজন মানুষ? এই যে আপনারা এই ধরনের প্রশ্ন করতাছেন, এইটাই হইলো সমস্যা। আপনাদের সঙ্গে যে মুহম্মদ জাফর ইকবালের বড় কোন ফারাক আছে, তা না। আপনাদের মনে বুদ্ধিজীবীদের একধরনের সৎ, ত্যাগী, দেশপ্রেমী নিরপেক্ষ টাইপ ইউটোপিয় ইমেজ তৈরি করা হইছে। অথচ এই জগতে কোনো মানুষই সকল ক্ষেত্রে মাসুম বা নির্ভুল বা নিষ্পাপ না। বুদ্ধিজীবীকে কেন তবে আপনারা এমন দেবতা বানাইতে চান এবং তাকে নিরপেক্ষই বা কেন হইতে হবে। বুদ্ধিজীবীর কাজ বরং কোনো একটা পক্ষ নিয়াই নিজের বিপক্ষের অধিকারের পক্ষেও থাকা। মুহম্মদ জাফর ইকবালের সবচাইতে বড় সমস্যা হইল যে তিনি নিজের অবস্থানটাকে সঠিক, ভালো ও নৈতিক অবসথান মনে করেন। তিনি মনে করেন যে
তাঁর মুক্তিযুদ্ধের ফিল্টারটি একটা উন্নত আদর্শিক ফিল্টার। তিনি ভালোর পক্ষে আছেন এবং যারা এই ফিল্টারে আটকে যাবে, তারা শয়তান। এবং এমন মনে করেন বলেই তাঁর পক্ষে এই বর্বর স্বৈরতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদকে এমন নগ্নভাবে সমর্থন করা সম্ভব হইছে। বাংলাদেশে আমি একজন অত্যন্ত ভদ্র ও বিনয়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে চিনি, যিনি পড়াশোনাতেও বেশ উন্নত। আমি তাকে কখনো দেখি নাই কারো সঙ্গে সামান্য কটু ভাষায় কথা বলতে। কিন্তু ইসলাম ধর্ম অনুসরণের ছুতা দিয়ে বহু ফ্যাসিবাদী, মিসোজিনিস্ট, রেসিস্ট বিশ্বাসকে তিনি লালন করেন এবং তাঁর পছন্দের কোনো সরকার যদি কখনো ক্ষমতায় আসে, আমি নিশ্চিত যে তিনি শরিয়তের নামে যেকোনো ধরনের রেসিজম, মিসোজিনি, শ্রেণি বৈষম্য ও অন্যান্য জুলুমকে সমর্থন দিবেন। আপনাকে, আমাকে শরিয়া পুলিশ দিয়ে শায়েস্তা করবেন এবং তা করবেন অত্যন্ত ভদ্রতা ও বিনয়ের সঙ্গে। আইন মেনে। হান্নাহ আরেন্ডট তাঁর ব্যানালিটি অফ ইভিল বইটাতে আইখম্যানরে নিয়া লিখতে
গিয়ে কাছাকাছি কিছু বিষয়ের অবতারণা করছিলেন। আইখম্যান অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথার, আইন মেনে চলা, নাগরিক মানসিকতার ভদ্রলোক ছিলেন। কিন্তু এই লোকই কিন্তু ছিলেন হলোকস্টের অন্যতম কারিগর। ঠাণ্ডা মাথায়, নিজে জাতির ভালোর চিন্তা করেই তিনি গণহত্যায় নিয়োজিত ছিলেন এবং এই ব্যাপারটা শুধু আইখম্যানের ক্ষেত্রেই সত্য না। বরং, নাজিবাদী বুদ্ধিজীবী ও নেতাদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশই ব্যক্তি জীবনে অত্যন্ত ভদ্র ও বিনয়ী মানুষ হিসাবে পরিচিত ছিলেন। কার্ল শ্মিট বা হাইডেগারদের নাজিবাদপ্রীতি বুঝে ওঠাটা তাদের অনেক ছাত্র ও বন্ধুদের জন্যেই কঠিন কাজ ছিল। কেননা, ব্যক্তি জীবনে তারা বেশ বন্ধুবৎসল ছিলেন এবং নিজেদের ইহুদি বন্ধুদেরও নানানভাবে হেল্প করেছেন। বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর যেইসব নেতা গণহত্যায় জড়িত ছিলেন বা সমর্থন দিছিলেন, তারা অনেকেই বিনয়ের অবতার হিসাবে পরিচিত ছিলেন। তাদের পরিবার, বন্ধু, অনুসারী তো বটেই, মিডিয়ার বিভিন্ন রেকর্ড থেকেও তেমন সাক্ষ্যই পাওয়া যায়।
ব্যানালিটি অফ ইভিল জিনিসটা কেমন? আপনি বড় ধরনের ইভিল কাজে যুক্ত থাকতে পারেন আইন মান্য করেই। বা নৈতিকভাবে সঠিক কাজ মনে করেই অনেক খারাপ কাজে যুক্ত থাকতে পারেন। মানুষ হিসাবে আপনি অত্যন্ত ভদ্র, বিনয়ী ও বন্ধু বৎসল হইয়াও অংশ নিতে পারেন নাগরিক ও মানবিক মর্যাদা হরণকারী জুলুমে। হক মনে করে বাতিল কায়েম করতে পারেন। অ্যান্ড দ্যাট ইজ দা ব্যানালিটি অফ ইভিল। জাফর ইকবালের বিষয়টাও এমনই। তিনি যা সত্য ও ন্যায় মনে করেন, তাঁর কারণেই তিনি ইভিল কাজে জড়াইতে পারেন। সত্য ও ন্যায় মনে না করলে বরং এর থেকে দূরে থাকতেন। তো, তিনি অসৎ বা ধান্দাবাজ না। তিনি জাস্ট হক ও বাতিলের পার্থক্য করতে অক্ষম। ওয়াল্টার বেনিয়ামিন এই কারণেই ফ্যাসিবাদকে আধুনিক সময়ের দাজ্জাল হিসাবে চিত্রায়িত করছিলেন। যেহেতু ফ্যাসিবাদ কায়েম হয় হক বা সত্য বা ন্যায় কায়েমের নামেই। হকের পোশাক পরেই তা কায়েম করে বাতিলের জুলুম। হাদিসে হয়তো এই কারণেই দাজ্জালকে একচোখা বলা হয়েছে। ফেসবুক থেকে
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট